যু’দ্ধবি’ধ্বস্ত ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় অবরু’দ্ধ বন্দরনগরী মারিউপোলের ডেপুটি মেয়র বলেছেন, রাশিয়ার হাম’লায় শহরে ঠিক কত মানুষ মা’রা গেছেন, তা তিনি জানেন না। তবে মারিউপোলের সড়কে সড়কে পড়ে আছে শত শত ম’রদেহ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সড়ক থেকে এক হাজার ২০৭ জনের ম’রদেহ উ’দ্ধার করা হয়েছে।
ডেপুটি মেয়র সেরহি ওরলোভ বিবিসিকে বলেছেন, ‘এগুলো কেবল সেসব ম’রদেহ; যেগুলো আমরা সড়ক থেকে উ’দ্ধার করেছি।’ তিনি বলেন, শহরের বাইরে কবরস্থানে পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় ৪৭ জনকে গণকবর দেওয়া হয়েছে। তাদের সবার পরিচয় শনা’ক্ত করা যায়নি। ওরলোভ বলেন, শহর থেকে লোকজনকে সরানো অথবা সহায়তার আওতায় নেওয়া সম্ভব হয়নি। বুধবার অন্তত ১০০ মানুষ ব্যক্তিগত যানবাহনে করে পা’লানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা যেতে পারেননি। রাশিয়ার সৈন্যরা শহরের তল্লা’শি চৌকিতে এলোপাতাড়ি গু’লিব’র্ষণ করায় তাদের গাড়ি ফিরতে বা’ধ্য হয়েছে। রুশ সৈন্যরা সরাসরি তাদের গাড়িতে নয়, গাড়ির চারপাশে গু’লি চালানো শুরু করায় তারা ফিরেছে।
ইন্টারন্যাশনাল রে’ড ক্রস অ’বরু’দ্ধ বন্দরনগরী মারিউপোলের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছে। শহরটিতে রেড ক্রসের প্রতিনিধি দলের প্রধান সাশা ভলকোভ বলেছেন, খাদ্য ও পানির সরবরাহ বি’পজ্জ’নক মাত্রায় ফু’রি’য়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বুধবার এক অডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য অনেক পরিবারে খাবার ফুরিয়ে গেছে। কিছু এলাকায় পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, লোকজন খাবারের জন্য একে অপরের ওপর আ’ক্র’মণ করতে শুরু করেছে।
সাশা ভলকোভ বলেন, মারিউপোলে সবজির কালো বাজার তৈরি হয়েছে। তবে সেখানে মাংস অথবা এরকম অন্য কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওষুধের সরবরাহ খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে জানিয়ে রেডক্রসের এই কর্মকর্তা বলেছেন, শহরের ফার্মেসিগুলো চার থেকে পাঁচদিন আগে লু’ট করা হয়েছে। তবে কিছু হাসপাতাল এখন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সাশা ভলকোভ বলেন, ‘আর্দ্রতা এবং ঠান্ডার কারণে আমাদের অনেকেই অ’সুস্থ হয়ে পড়ছে। লোকজন বিভিন্ন ধরনের ওষুধের চাহিদা জানাচ্ছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও ক্যা’নসার রোগীদের ওষুধ। কিন্তু শহরে এসব আর খুঁজে পাওয়ার কোনো উপায় নেই।
রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ১৫ দিনে ইউক্রেনের বেশিরভাগ শহর একেবারে ধ্বং’সস্তুপে পরিণত হয়েছে। রাজধানী কিয়েভের প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা পালিয়েছেন বলে জানিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেশী এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ২০ লাখের বেশি ইউক্রেনীয় পা’লিয়ে গেছে বলে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবারও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তুরস্কের আনতালিয়া শহরে বসলেও সেখান থেকে যু’দ্ধ অবসানের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি আসেনি। এমনকি এই যু’দ্ধ কবে নাগাদ শেষ হবে এবং এর পরিণতি কী হতে পারে, সে ব্যাপারে কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।
তবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেছেন, শেষ পর্যন্ত আগ্রাসী শক্তি রাশিয়ার বিরু’দ্ধে লড়াই করবে তার দেশ। রাশিয়ার কাছে কোনোভাবেই আ’ত্মসম’র্পণ করা হবে না বলে হুং’কার দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ালে তা বৈশ্বিক খাদ্যের দাম আরও বৃদ্ধি করবে বলে সত’র্ক করে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পাশাপাশি রাশিয়ার বিরু’দ্ধে পশ্চিমাদের আরোপিত নিষে’ধাজ্ঞাকে অ’বৈধ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সার উৎপাদনকারী দেশটির এই প্রেসিডেন্ট।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার কৃষিমন্ত্রী দিমিত্রি পাত্রুশেভ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি এক বৈঠকে বলেন, রাশিয়ার খাদ্য নিরাপ’ত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং মস্কো বৈশ্বিক কৃষি বাজারে রপ্তানির বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, পশ্চিমা সব নিষেধাজ্ঞা অ’বৈধ এবং রাশিয়া পশ্চিমাদের সৃষ্ট এই সংক’টের সমাধান শান্তভাবে করবে। বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি শক্তির উৎপাদনকারী মস্কো। ইউরোপের এক তৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ করে তারা। ওই বৈঠকে পুতিন বলেছেন, বৈশ্বিক বাজারে চু’ক্তিভিত্তিক বাধ্যবাধকতা পালন করবে তার দেশ।
ক্রেমলিনের এই নেতা ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভি’যান শুরুর পর থেকে আরোপিত সব নিষেধা’জ্ঞা রাশিয়ায় এখন অনুভূত হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, এমন মুহূর্তে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের জন্য মানুষের চাহিদা সর্বদা বৃদ্ধি পায়। তবে আমরা শান্তভাবে কাজ করে এসব সমস্যার সমাধান করব; যা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।’